কাজী ওয়াসিমুল হক: [২] ছেলে তালাক দেওয়ার পর মেয়েপক্ষ ছেলের বাসায় এসে সালিস বসিয়ে মেয়েকে গছিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, ছেলে তাকে বাসায় রাখতে বাধ্য হয়েছে, ছেলে তার উকিল বন্ধুকে ফোন দেওয়ার পর সেই বন্ধু উকিল তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে বলেছিল, ৯০ দিন পর যখন তালাক হয়ে যাবে, তখন নাকি মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে ছেলে আমার ‘ল’ ফার্মে আসে, কাহিনি শুনে আমার মাথায় হাত, জানালাম ভাই মেয়েকে আবার বাসায় নিয়ে তার সাথে সংসার করায় ধরে নেওয়া হবে যে আপনি আপনার দেওয়া তালাক প্রত্যাহার করেছেন। এই ব্যর্থ তালাক প্রত্যাহার করে লাগলে আবার তালাক দিন।

এবার ছেলে আমার প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হয়ে আগে তালাক প্রত্যাহার করে, জিডি করে, পরে আবার তালাক দিল, এরপর সেই আবহমান রুটিন, মেয়েপক্ষ আমার ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে নারী-শিশু মামলা করে দিল, তখন আমার বানানো সেই জিডি অমূল্য কাজে এসেছিল, তাকে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাইয়ে দিলাম, কেস হয়েছিল সম্ভবত নওগায়, বেচারাকে সেখানে গিয়ে কেস ফেস করতে হতো। 

ফুটনোট: মেয়ে অভিযোগ করেছিল স্বামী ঢাকা থেকে নওগা গিয়ে তার বাসায় এসে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে গেছে। পরে জেরার সময় দেখা গেলো  ঠিক সেদিন ছেলে এক ট্রেনিংয়ে ঢাকাতেই ছিলো, সব ধরনের প্রমাণ ছিলো সেদিন ট্রেনিং করার। কেবল মিথ্যা কেস নয়, শুনানির দিন মেয়ে কেঁদেকেটে কোর্টে এমন একটা হাপুস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো যে, বয়স্ক বিচারকেরা পর্যন্ত টলে যেতেন। প্রথম তালাক প্রত্যাহার ইস্যুতে সেখানকার এক চেয়ারম্যান প্লাস এক স্থানীয় উকিল ফতোয়া দিয়েছিল যে, সালিশ না করে তালাক প্রত্যাহার করা যায় না, আমি যখন সেই সালিসের আইনটা দেখতে চেয়েছিলাম, তারা আর সামনে আসেননি।

[৩] মানুষ মনে করে তালাক হয় যৌতুক আর পরকীয়ার কারণে, তা হয়, কিন্তু সেটা ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র, ম্যাক্সিমাম তালাক হয় মেন্টাল মিসম্যাচের কারণে, স্বামী মনমতো আয় করতে পারে না দেখেও তালাক হতে দেখেছি। আমাদের মুশকিল হচ্ছে, আজকাল আমরা অনেকেই নিজেদের যোগ্যতা আর চাহিদা পুরোপুরি বোঝার আগেই বিয়ে করে ফেলি, ছেলের আসল চাহিদা হয়তো গৃহবধূ, বন্ধুদের দেখাদেখি কোনো এক ক্যারিয়ার ওমেন বিয়ে করে পস্তাচ্ছে, মেয়ের চাহিদা ছিল হয়তো রোমান্টিক এক স্বামী, টাকা দেখতে যেয়ে এক যন্ত্রমানবকে বিয়ে করে ফেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব সংসারে দাম্পত্য সম্পর্ক টলটলায়মান অবস্থায় থাকে। 

আরেকটা কথা না বলে পারছি না, জৈবিক আর মানসিক ভাবে বিয়ের উপযুক্ত হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার, যে পুরুষ ছয় বছরে চৌদ্দটা বাচ্চা পয়দা করতে পারে, নট নেসেসারি সে মানসিকভাবে এমনকি একজন স্ত্রীর সাথেও ব্যালান্স করে চলতে পারে। পয়েন্ট টু বি নোটেড, ফেসবুকে লাইফস্টাইলে শো অফ করাটা অনেকের সংসারেই আজকাল অশান্তি সৃষ্টি করে, আমাকে দেখে আরেকজনের বা আরেকজনকে দেখে আমার মনে অতৃপ্তি জেগে উঠতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত দাম্পত্য সম্পর্কে আঘাত করে। ফাইনালি, কখনো কাউকে হুট করে বিয়ে করবেন না, কেউ যদি খোঁজখবর নিতে না দিয়ে দ্রুত বিয়ের জন্য চাপ দেয়, জাস্ট ড্রপ করবেন, জানেন তো, পঁচা মাছই আগে বিকাতে হয়। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে